arteducation

সবজান্তা-মামা

 সবজান্তা-মামা


আমাদের ছোটকাকিমার এক ভাই ছিলেন। তিনি থাকতেন আমাদের শহর থেকে একটু দূরের একটা গ্রামে। মাঝে মধ্যে তিনি কোনও কাজে শহরে এলে আমাদের বাসায় উঠতেন। খুড়তুতো ভাইদের সুবাদে আমরাও তাঁকে মামা বলতাম।


ইনি লোক খুব ভাল ছিলেন, কিন্তু মামার একটা দোষ ছিল যে, তিনি ছিলেন সবজান্তা। সব বিষয়ে সবকিছু তিনি জানতেন। আর আমাদের সব সময় উলটো-পালটা প্রশ্ন করতেন। 'আকবর বাদশার ক’ ভাই ছিল’, ‘ঢাকা থেকে কলকাতা কতদূর’, ‘জবাফুল দিনের কোন সময়ে ফোটে' ইত্যাদি যত রাজ্যের বিদঘুটে প্রশ্ন করার অভ্যেস ছিল তাঁর। আমরা কোনও কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে পারতাম, কোনওটা পারতাম না। জবাব দিলে মামা খুশি হয়ে কখনও কখনও আমাদের লজেন্স বা বিস্কুট কিনে দিতেন। যে-কোনও কারণেই হোক দাদা। কিন্তু মোটেই এই সবজান্তা-মামাকে সহ্য করতে পারত না। যথাসাধ্য এড়িয়ে এড়িয়ে চলত। একদিন মামা বললেন, আমাদের সন্তোষের রাজবাড়ি দেখাতে নিয়ে যাবেন। এই রাজবাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে দু' মাইল, আড়াই মাইল দূরে, তখনও আমাদের ওনিকে রিকশা পৌঁছয়নি। কোথাও যেতে হলে পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেলে যেতে হত। আমরা সবাই মিলে মামার সঙ্গে হেঁটেই রওনা হলাম। রাজবাড়ি দেখার লোভ সামলাতে না পেরে দাদাও আমাদের সঙ্গ নিল।


পথে মামাবাবু আমাদের নানারকম পাখি, গাছপালা দেখিয়ে প্রশ্ন করে করে সেসব চিনিয়ে দিতে লাগলেন। একটা পাখি দেখিয়ে আমাদের শেখালেন, “এটা মাছরাঙা পাখি।” তারপর বড় রাস্তার একপাশে একটা গাছ দেখিয়ে বললেন, “এটা হল মেহগনি গাছ। এর পাতাগুলি ভাল করে দ্যাখো, কেমন অন্যরকমের দেখতে!” ফেরার পথে সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল, দূরে মাঠের মধ্যে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, “ওই দ্যাখো ধাড়ি খেঁকশেয়াল।”


আমরা ক্লান্ত হয়ে বাড়ি পৌঁছলে তিনি বললেন “রাজবাড়ি দেখা ছাড়াও আজ তোমরা অনেক কিছু নতুন চিনতে পারলে, শিখলে।" আমরা সমস্বরে “হ্যাঁ” বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু দাদা হঠাৎ বলে বসল, “হ্যাঁ শিখলাম যে, কাঠঠোকরা পাখিকে বলে মাছরাঙা পাখি, ইউক্যালিপটাস গাছকে বলে মেহগনি মাছ, আর শেয়ালকে বলে ধাড়ি খেঁকশেয়াল।” দাদা এতগুলো ভুল ধরে ফেলায় সেদিন সবজান্তা মামা খুবই বোকা বনে গিয়েছিলেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post