arteducation

জবাগাছ

জবাগাছ


ওরকম, অত বড় জবাফুলের গাছ আর জীবনে দেখলাম না। আমাদের বাড়ির বাইরের বারান্দায় সিঁড়ির একপাশে দুটো গন্ধরাজ ফুলের গাছের মধ্যে ছিল সেই বিরাট জাগাছটা, প্রায় একটা কলমের আমগাছের মতো বড়ো। ফুলগাছ নিচু হয়, মানুষের হাতের নাগালে থাকে, তাই কোনও পাখি তাতে বাসা বাঁধতে চায় না। কিন্তু আমাদের জবাফুলের গাছটায় এত ফুল, পাতা ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো ছিল যে, শুধু টুনটুনির মতো সরল পাখিই নয়, শালিকের মতো চালাক পাখিও নিশ্চিন্ত মনে বাসা বাঁধত, লম্বা এবং পাতাভরা গাছটাকে বেশ নিরাপদ বলেই জেনে গিয়েছিল পাখিরা। প্রতিদিন, সারা বছর ধরে রাশি রাশি ফুল ফুটত ওই গাছে। দিশি, লাল জবা, ঘন সবুজ পাতার মধ্যে উজ্জ্বল লাল রঙের বড় ফুলগুলি ঝলমল করত সমস্ত দিন। এই গাছটার ওপরে রাগ করে একবার আমি আর দাদা কুড়ুল দিয়ে কাটতে গিয়েছিলাম। তখন আমরা বেশ ছোট, প্রথম ভাগ-দ্বিতীয় ভাগের বয়েসে আছি, তাই আমাদের ক্ষমতা হয়নি কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে গাছটা কাটার, সেই জন্যে গাছটা রক্ষা পেয়েছিল।


বাইরের বারান্দায় একটা বড় তক্তাপোশে বসে প্রতিদিন বিকেলবেলায় আমি আর দাদা এক মারকুটে মাস্টারমশায়ের কাছে পড়তাম। কারণে অকারণে মাস্টারমশায় ওই জবাগাছ থেকে ডাল ভেঙে এনে শপাশপ মারতেন। তাই গাছটার ওপর আমাদের রাগ।


সে যা হোক, মাস্টারমশায় প্রায় প্রত্যেকদিনই বলতেন, তাঁর খুব মাথা ধরেছে। আমাদের ছাইভস্ম পড়াতেন, ডাল ভেঙে মারতেন আর ফাঁকে-ফাঁকে ‘উঃ’ করে নিজের মাথা টিপতেন। এই সময় একটা ঘটনা ঘটল। একদিন বিকেলে দাদা ঠাকুমাকে গিয়ে বলেছে, 'আজ পড়ব না। খুব পেটব্যথা করছে। ঠাকুমা বললেন, 'ও কিছু নয়, তোমার পেট খালি, তোমার পেটে কিছু নেই, তাই ব্যথা করছে। কিছু খেয়ে নাও।' এর পরেই মাস্টারমশায় এসেছেন। এসে যথারীতি মাথা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। দাদা দুম করে মাস্টারমশায়কে বলল, 'আপনার মাথা-ব্যথা কেন আমি জানি।' তিনি গম্ভীরভাবে বললেন, 'কেন?' দাদা বলল, 'আপনার মাথা একদম খালি আপনার মাথায় কিছু নেই, তাই ব্যথা করছে।' মাস্টারমশায় সচকিত হয়ে বললেন, 'কে একথা বলেছে?” দাদা বলল, 'ঠাকুমা এইমাত্র বলল।'


মাস্টারমশায় সেদিন সেই যে গেলেন, আর এলেন না। আমাদের আর জবাগাছ কেটে ফেলার দরকার পড়েনি।

Post a Comment

Previous Post Next Post