arteducation

পরোপকার

পরোপকার


সে বছর পরোপকারের ভূত চেপেছিল আমাদের কাঁধে। আমাদের স্কুলে যে নতুন ব্রতচারীর মাস্টারমশাই এসেছিলেন তিনি আমাদের ব্যায়াম, ব্রতচারী, নৃত্যগীত ইত্যাদি ছাড়াও নানা আদর্শে উদ্ধুদ্ধ করতেন ।তিনি বলতেন, ‘দৈনিক অন্তত একটা করে পরোপকার করবে।'


এই পরোপকারের ব্যাপারটা আর কারও না হোক আমার দাদার মাথার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। রাস্তায় একটা কুকুর তার বাচ্চাদের দুধ দিচ্ছিল না, বাচ্চাগুলো তখন বেশ বড় হয়েছে, মায়ের চেহারা হাড়জিরজিরে শুকনো। বাচ্চাগুলো কাছে গেলেই খেঁকিয়ে উঠছে। দাদা সেই বাচ্চাগুলোকে জোর করে মায়ের দুধ খাওয়াতে গেল। সঙ্গে-সঙ্গে মা খেঁকিয়ে তেড়ে গেল দাদাকে। বহু কষ্টে প্রাণপণ দৌড়ে দাদা আত্মরক্ষা করে। কিন্তু এতেও দাদার শিক্ষা হয় না।


আমাদের ব্রতচারী মাস্টারমশাই সবচেয়ে জোর দিতেন অবোলা জীবজন্তু, অন্ধ আতুর অসহায়দের উপকারের দিকে। সপ্তাহে প্রত্যেক শনিবার ব্রতচারী ক্লাসে মাস্টারমশাই জানতে চাইতেন, সেই সপ্তাহে কে কী পরোপকারের কাজ করেছে। তখন দাদা একবার ফেল করে আমার সঙ্গে এক ক্লাসে পড়ছে। সেদিন ক্লাসে দাদা এল দেরি করে, মাথার চুল এলোমেলো, জামার আস্তিন গোটানো, হাফপ্যান্টের নীচে হাঁটুতে ধুলো লেগে রয়েছে। দাদার এ-অবস্থা দেখে আমিও অবাক হলাম, কারণ আমরা দু'জনে একসঙ্গে বাড়ি থেকে বার হয়েছি, দাদা এতক্ষণ কোথায় কী করে এল কে জানে! দাদার এ-অবস্থা দেখে সমস্ত ক্লাসে একটা গুঞ্জন উঠল। মাস্টারমশাই জানতে চাইলেন, “কী ব্যাপার, এ-অবস্থা কেন? এত দেরি কেন?” দাদা হাঁটু থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, “একটা জন্তুর উপকার করতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। সেই জন্যেই দেরি হল। আমার কোনও দোষ নেই, আপনার কথা শুনে আমার বিপদ হয়েছে।”


বিস্মিত মাস্টারমশাই জানতে চাইলেন, “কী বিপদ?” দাদা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল, “আর বিপদ! ইস্কুলে আসার পথে আদালতের পিছনের মাঠটায় দেখি অনেকগুলো গোরু চরছে। একটা গোরু মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন যে লোকটা গোরু চরাচ্ছিল সে তাকে ছুটে গিয়ে লাঠি দিয়ে মারে। আমিও সঙ্গে-সঙ্গে ছুটে গিয়ে লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি, লাঠি কেড়ে নিতে যাই। তারপর পনেরো মিনিট ধরে মারামারি, ধস্তাধস্তি। অন্য যারা গোরু চরাচ্ছিল তারাও আমাকে মারতে আসে। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে দৌড়ে পালিয়ে এলাম।”

Post a Comment

Previous Post Next Post