arteducation

ভূগোলের ভুল

 ভূগোলের ভুল 


আমি আর দাদা বোধহয় বছর-দুয়েক একসঙ্গে পড়েছিলাম, ক্লাস সেভেন আর ক্লাস এইট, খুব সম্ভব এই দুই ক্লাস। দাদা মোটেই পড়াশুনা তৈরি করে ক্লাসে আসত না। সারাদিন এ-পাড়া ও-পাড়ায়, খালে-বিলে, বন-বাদায় ঘুরে বেড়াত। কখনও শিমুল গাছে উঠে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিয়ে আসত লাল টকটকে ফুলের গুচ্ছ, কখনও শরবনের ভেতর থেকে খুঁজে-খুঁজে কুড়িয়ে আনত বুনো হাঁসের নীলচে ছোট-ছোট গোল-গোল ডিম।


ইস্কুলে, বাড়িতে এ-সব নিয়ে দাদা অনেক গালাগাল খেয়েছে, কিছু মারধোরও জুটেছে কপালে, কিন্তু দাদা মোটেই শোধরায়নি। একদিন ব্যাকরণের ক্লাসে বিশিষ্টার্থক বাক্য রচনা শেখানো হচ্ছে, দাদা একটু দেরি করে ক্লাসে এল হাতে একটা গাছের ডাল, তাতে খুব ছোট ঝিরঝির ফুল, ফিকে রঙের। ক্লাসটিচার দাদাকে দেখে বললেন, “কী হে, তুমি যে একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে উঠেছ।” দাদা তখন হাতের ভাঙা ডালটা দেখিয়ে বলল, “আমি নই স্যার, এই হল ডুমুরের ফুল। কবরখানার পিছনের মাঠ থেকে পেড়ে আনলাম। ডুমুর গাছটা ছেয়ে আছে ফুলে।”


সত্যি-মিথ্যে জানি না, দাদার দৌলতে জীবনে সেই একবারই আমি এবং আমার সহপাঠীরা (মাস্টারমশাই সমেত), ডুমুরের ফুল দেখি। এর আগে বা পরে আর কখনও দেখিনি।


অবশ্য ডুমুরের ফুলের চেয়ে অনেক ভয়াবহ কাণ্ড ঘটেছিল ভূগোলের ক্লাসে। ভূগোলের মাস্টারমশায়ের স্বভাব ছিল গোলমেলে প্রশ্ন করার। সেদিন কী কারণে দাদা প্রথম থেকেই ক্লাসে ছিল। উলটোপালটা প্রশ্ন করতে করতে মাস্টারমশাই জিজ্ঞেস করলেন, “মাউন্ট এভারেস্ট আবিষ্কার হওয়ার আগে সবচেয়ে উঁচু পর্বতচূড়া কী ছিল?” ক্লাসের ছেলেরা যে-যার বুদ্ধি ও জ্ঞান অনুযায়ী বলল, “আলপস”, “কারাকোরাম”, “কাঞ্চনজঙ্ঘা” ইত্যাদি। দাদা এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিল, হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে মাস্টারমশাইকে একদম বোকা বানিয়ে দিয়ে বলল, “আবিষ্কার হোক আর না হোক, তাতে কিছু আসে যায় না, মাউন্ট এভারেস্ট তো সব সময়েই ছিল। মাউন্ট এভারেস্ট আবিষ্কার হওয়ার আগেও সে ছিল সবচেয়ে উঁচু।”

Post a Comment

Previous Post Next Post