arteducation

দুটি আজব জিনিস

 দুটি আজব জিনিস


অ্যালার্ম ঘড়ি 


আমার দাদার আমার পৈতে একসঙ্গে হয়েছিল। সেই সময় অনেক জিনিসের মধ্যে একটা টেবিল-ঘড়ি ,যাকে অ্যালার্ম টাইমপিস বলে, আমরা উপহার পাই। 

সেই বয়েসেই আমাদের মাথায় সমস্যা ঢুকেছিল, এই ঘড়িকে আলার্ম-ঘড়ি বলে কেন ? এর মধ্যে বিপদের কী আছে? সুখের কথা, এই প্রশ্নের উত্তরও আমরা যথাকালে পেয়ে গিয়েছিলাম।


সত্যি বলতে কি, ঐ টেবিল-ঘড়িটির থেকে বিপজ্জনক জিনিস আমার এই সামান্য জীবনে আমি কমই দেখেছি। দু-তিন মাস ঘড়িটা ভালই চলেছিল, তারপর একদিন আমাদের পোষা হুলো বেড়াল জলধির দৃষ্টি ঘড়িটার উপরে পড়ল। জলধির তখন বয়েস হয়েছে, চোখে কম দেখে। ঘড়ির টিকটিক শব্দে আকৃষ্ট হয়ে টেবিলের উপর উঠে প্রায় আধঘণ্টা ধরে ঘড়িটাকে ঘুরে শুঁকে-শুঁকে দেখল, ঘড়িটায় অ্যালার্ম দেওয়া ছিল তখন, কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ বেজে উঠতেই জলধি চমকে এক থাবার আঘাতে ঘড়িটিকে টেবিল থেকে নীচে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। পড়ে গিয়ে ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেল, কাঁচ ভেঙে গেল।


দিন-পনেরো পরে ঘড়িটা সারিয়ে আনা হ'ল। কিন্তু তখন থেকেই গোলমাল। অ্যালার্ম দিলেই অ্যালার্ম বাজার সঙ্গে-সঙ্গে ঘড়িটা টেবিলের উপর নাচতে থাকত। আর, সে কী নাচ! টেবিলের দু-তিন ইঞ্চি উপরে লাফিয়ে-লাফিয়ে নেচে শেষে নীচে গড়িয়ে পড়া। আবার ঘড়ি বন্ধ, আবার কাঁচ ভাঙা।


এই রকম বারকয়েক হ'ল। আমরা সাবধান হলাম। ঘড়ির দুটো পা দাদা শক্ত সুতো দিয়ে দুটো বইয়ের সঙ্গে বেঁধে দিল যাতে ঘড়িটা অ্যালার্ম বাজার সময় নড়াচড়া না করতে পারে। দাদাকে বলেছিলাম, 'অ্যালার্ম না দিলেই হয়। দাদা জবাবে বলল, 'অ্যালার্ম ঘড়ি আলার্ম না দিলে ঘড়ি কিসের?' কিন্তু এতেও হল না, দুদিন পরেই বই দুটোসুদ্ধ ঘড়িটা টেবিল থেকে পড়ল।


এবার সারিয়ে আনার পরে, টেবিলের উপরে একটা পুরনো তোষক ভাঁজ করে তার উপরে ঘড়িটাকে বসিয়ে দেয়া হ'ল, এতে ঘড়ির নাচ কিছুটা কমল, কিন্তু অ্যালার্ম-বাজনা একদম মার খেয়ে গেল, কেমন চিঁচিঁ করতে লাগল।


অবশেষে ছাদের সঙ্গে দড়ি দিয়ে ঘড়িটাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হ'ল। ঐ ভাবেই দম দেওয়া হাতো ঐ ভাবেই চলত, অ্যালার্মের সময় ঐ ঝুলন্ত অবস্থায় একটু ছটফট করত, এই যা। চলতে ফিরতে যাতে ঘড়িটা গায়ে না লাগে তাই সাত ফুট উঁচুতে ঘড়িটা দাদা ঝুলিয়ে দিয়েছিল, টেবিলে দাঁড়িয়ে দম দিতে হত।


একদিন মাস্টারমশাই আমাদের দুজনকে পড়াচ্ছিলেন, মাথার উপরে ঘড়িটা বেশ টিকটিক করছিল। কিন্তু ইঁদুরে বোধহয় ছাদের দড়ির গিঁটটা কেটে দিয়েছিল, হঠাৎ ছিঁড়ে ঘড়িটা মাস্টারমশাইয়ের মাথায় পড়ল, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। তারপর যা হবার তাই হ'ল। মাস্টারমশাই গেলেন, আমাদের পড়াশুনা গেল, ঘড়িটা তো গেলই।

Post a Comment

Previous Post Next Post