arteducation

সাইকেল

 সাইকেল


আমার দাদা যে ক্লাস সেভেন থেকে এইটে ওঠার পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি, তার জন্যে সম্পূর্ণ দায়ী ছিলেন আমার ছোটকাকা।

 ব্যাপারটা খুবই দুঃখের। ক্লাস সেভেনের হাফ ইয়ারলি পরীক্ষাতে অন্য সব বিষয়ে

মানে মানে পাশ হয়ে গেলেও দাদা কিন্তু অঙ্কে উতরোতে পারল না। অঙ্ক পরীক্ষায় পেল

মাত্র সতেরো।


দাদার রেজাল্ট দেখে বাড়ির সবাই খুব খাপ্পা এবং হতাশ হয়ে পড়ল। শুধু ছোটকাকা বললেন, “এতে এত চেঁচামেচির কী আছে? আমি তো সিক্সে না সেভেনে ইংরেজিতে পেয়েছিলাম মাত্র পনেরো। পরে কি আমি বি এ, এম এ পাশ করিনি ? এখন কি আমি গড়গড় করে ইংরেজি বলতে, লিখতে পারি না? আমি কি সাহেব কোম্পানীতে চাকরি করছি না?”


দাদার দিকে ছোটকাকার চিরদিনই একটু টান বেশি ছিল, কিন্তু এবার তিনি তাঁর সদ্যপ্রাপ্ত সাহেব-কোম্পানির চাকরির দৌলতেই বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললেন। তিনি দাদাকে কবুল করলেন যে, সে যদি বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে কোনওরকমভাবে মোটামুটিও পাশ করতে পারে তবে একটা ঝকঝকে নতুন সাইকেল উপহার পাবে। শুনে আমাদের খুব রাগ আর হিংসে হল। আমরা যারা সমস্ত বিষয়ে ভালভাবে পাশ হয়েছি দিক থেকে অবশ্য

আমাদের ছোটকাকা দুটো টাকাও উপহার দিলেন না। অথচ দাদার জন্যে নতুন সাইকেল।


 শেষ পর্যন্ত কিন্তু দাদার ভাগ্যে সাইকেলটা জোটেনি। ছোটকাকার দিক থেকে অবশ্য  কোনও ত্রুটি হয়নি, দাদা নিজেই দায়ী ছিল ব্যাপারটার জন্যে।


 সেবার অ্যানুয়ালে অঙ্ক পরীক্ষায় দাদা আরও খারাপ করল, পেল মোটমাট দশ। বড়দিনের ছুটিতে ছোটকাকা বাড়িতে এসে দাদাকে ধরলেন, “তোকে এত করে বলে গেলাম, অঙ্কটায় পাশ কর, তা হলে একটা সাইকেল কিনে দেব, তাও ফেল হলি?”


দাদা গম্ভীর হয়ে বলল, “ওই জন্যেই তো ফেল হলাম।” উত্তর শুনে কাকা অবাক, জিজ্ঞেস করলেন, “তার মানে?” দাদা আরও গম্ভীর হয়ে জবাব দিল, “ওই সাইকেল চড়া শিখতে গিয়েই গত কয়েক মাস মোটেই অঙ্ক কষা হল না। আর শেষ পর্যন্ত সেইজন্যেই আমি ফেল হলাম। নিকুচি করেছে তোমার সাইকেলের।”

Post a Comment

Previous Post Next Post