arteducation

জোকার

 জোকার


যে বছর বড় বন্যা হয়েছিল, সে-বছরেই শীতের সময় আমাদের শহরে একটা সার্কাস- পার্টি এসেছিল। সেই সার্কাসের যে জোকার সে নানারকম মজার কাণ্ড করে আর মজার খেলা দেখিয়ে সমস্ত শহরবাসীর হৃদয় জয় করেছিল।


সেই শীতকালেই আমাদের পিছনের বাড়ির লোকেরা বদলি হয়ে কোথায় চলে যায়। তখন তাদের পোষা হুলো বেড়ালটা আমাদের বাসায় চলে আসে। হুলো বেড়ালটার চেহারা, চালচলনে কোথায় যেন একটা সার্কাসের ওই জোকারের আদল ছিল। আসলে তার মুখটা ছিল জোকারটার মতো সাদা-কালো, সিঁড়ির উপরে বসে বেড়ালটা যখন ইতিউতি চোখ মটকিয়ে তাকাত, একেবারে হুবহু সেই জোকার। ফলে এই হুলোটার ‘জোকার' নামকরণ করতে আমাদের খুব ভাবনাচিন্তা করতে হয়নি।


বেড়াল হিসেবে জোকারের স্বভাবচরিত্র মোটামুটি ভালই ছিল। হুলোরা সাধারণত যেরকম হিংস্র হয়, সে তা ছিল না। সে ছিল নির্বিকার, নির্বিরোধ স্বভাবের। চুরি-জোচ্চুরির ধাত ছিল না। এঁটোকাঁটা যা জুটত তাই খেয়ে থাকত।


জোকার অনেক সময় এসে আমাদের পায়ে মাথা ঘষত। আমার ঠাকুমার তাতে খুব আপত্তি ছিল। তাঁর বক্তব্য ছিল, ওইভাবে বেড়ালেরা নাকি মানুষের আয়ু চুরি করে নিজের আয়ু বাড়িয়ে নেয়। আমরা সে-কথা খুব গ্রাহ্য করিনি। জোকার পায়ে মাথা ঘষলে আমাদের বেশ ভালই লাগত। আমরা কখনও কখনও তাকে কোলেও তুলে নিতাম। সে আহ্লাদে ঘড়-ঘড় করত। স্টেশন না ধরতে পারলে যে রকম ঘড় ঘড় আওয়াজ বেরোয় ঠিক সেইরকম শব্দ বেরোত আহ্লাদি জোকারের ভেতর থেকে।


এই জোকার একবার আমার ছোট ভাই বিজনকে কামড়ে দেয়। সে এক আশ্চর্য ঘটনা। বিজন চিরদিনই সাদাসিধে, সরল মানুষ। ইস্কুলে তাকে বেড়ালের উপর রচনা লিখতে দিয়েছিল। বিজন কি ভেবেছিল কে জানে। বেড়ালের উপর রচনা সুতরাং বেড়ালের গায়ের উপরেই লিখতে হবে এই রকম ধরে নিয়েছিল বোধহয়।নিরীহ জোকারকে ধরে তাকে উপুড় করে তার লোমহীন পেটের উপরে বিজন পেনসিল দিয়ে রচনা লিখছিল : 'বিড়াল খুব ভাল। আমি বিড়াল খুব ভালবাসি। বিড়ালও আমাকে খুব ভাল... '


এই পর্যন্ত লেখার পর হঠাৎ জোকার খেপে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বিজনের হাতে কামড়ে দেয়। বিজনের ডান হাতের কবজিতে এখনও সেই কামড়ের চিহ্ন আছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post