খবরদার
পুণ্যলতা চক্রবর্তী
দুপুরবেলা—বাইরে রোদ ঝাঁঝাঁ করছে, ঘরের ভিতর মিনা মায়ের কাছে শুয়ে গল্প শুনছে । খানিক পরে মা ঘুমিয়ে পড়লেন, অমনি মিনা উঠে পা-টিপে-টিপে বাইরে গেল ।
সামনের ছাদে মা কতরকম যে আচার রোদে দিয়েছেন, দেখলেই খেতে লোভ হয়, শুঁকলেই জিভে জল আসে ! মিনা সবে অসুখ থেকে উঠেছে, তাই তার আচার খাওয়া মানা, রোদে যাওয়াও মানা । রোদে যাওয়াও মানা।
চুপি চুপি ঢাকনি খুলে, বেশ মোটা একছড়া তেঁতুলের আচার তুলে মুখে দিতে যাবে, হঠাৎ কে যেন বলে উঠল 'খবরদার !' এমনি চমকে গেল মিনা যে আচারটা হাত থেকে পড়ে গেল । চারদিকে তাকিয়ে দেখল, কেউ কোথাও নাই ! 'নিশ্চয় ভুল শুনেছি'—ভেবে একটু পরে সে আবার আস্তে আস্তে হাত বাড়াল – আবার কে বলল, ‘ভাল হবে না বলছি!'
এবার ভীষণ ভয় পেয়ে মিনা ছুটে মায়ের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়ল । চোখ মেলে মা বললেন—‘গরমে ঘুরে বেড়িও না মিনু, একটু ঘুমোও!' মিনার বুকটা তখনও ঢিপ ঢিপ করছিল । মাকে সব কথা বলতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু সে যে লুকিয়ে আচার খেতে রোদে গিয়েছিল, তাই লজ্জায় কিছু বলতে পারল না ।
ওর দাদা-দিদি মন্টু আর রিনা স্কুল থেকে ফিরলেই মিনা তাদের সব কথা বলল । রিনা ভয়ে ভয়ে বলল—'ভৌতিক ব্যাপার নয় ত?' মন্টু হেসেই সব উড়িয়ে দিল । রোজ বিকালে ছাতে কত খেলা হয়, আজ মিনার কোন খেলাতেই মন বসছে না । খানিক পরে রিনাও বলল— 'চল ঘরে যাই—মিনার হিম লাগবে।'
মন্টু বলল-——কোথায় হিম ? ও, ভূতের ভয়ে ঘরে পালাচ্ছিস বুঝি ? আমি বাপু ভূতকে কেয়ার করি না । আসুক না বাবা-ভূত, ছানা-ভূত, পাকা-ভূত, কাঁচা-ভূত, অদ্ভুত, কিম্ভূত !’—‘খবরদার ! ভাল হবে না বলছি !’—ঠিক তার মাথার উপর থেকে কে ধমক দিল ! রিনা-মিনা ত ভয়ে কাঠ ! মন্টুও হাঁ করে উপর-দিকে চেয়ে রইল।
অনেকটা উঁচুতে দেয়ালের গায়ে একসারি ঘুলঘুলি। মই লাগিয়ে উঠে মন্টু ঠিক তার মাথার উপরকার ঘুলঘুলির ভিতর হাত ঢোকাল, ‘ঝটপট-চ্যাঁ-চ্যাঁ' শব্দ হল, তারপর একটা কালো পাখিকে চেপে ধরে নিয়ে সে নেমে এল। পাখিটা সমানে চেঁচাচ্ছে—'খবরদার! ভাল হবে না বলছি! খবরদার!'
মা বললেন—'এটা নিশ্চয় কারো পোষা ময়না, খাঁচা থেকে পালিয়ে এসে হয়ত কাক-চিলের ভয়ে ওখানে লুকিয়েছিল, কেমন কথা বলছে দেখ না ! ঠিক যেন মানুষের মত ।' রিনা-মিনা-মন্টু হেসে বলল—‘তাই ত আমাদের সবাইকে এমন বোকা বানিয়ে দিয়েছিল !