arteducation

নাম

 নাম


তারাপদ রায়


আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে পশ্চিম দিকে অল্প কিছুটা গেলে মোড়ের মাথায় ছিল আমাদের শহরের কালীবাড়ি। যদিও নাম কালীবাড়ি, সেখানে দোল, দুর্গোৎসব, সঙ্কীর্তন সব কিছুই হত । আমরা পরীক্ষার দিন সকালে কালীবাড়িতে প্রণাম করে আসতাম। অনেক সময়, পুজোপার্বণের দিনে মা কিংবা ঠাকুমা'র সঙ্গে দল বেঁধে সন্ধেবেলা কালীবাড়িতে আরতি দেখতে যেতাম।


এই কালীবাড়ির পাশের বাড়িতেই থাকত আমাদের দুই বন্ধু, মানিক আর রতন। মানিক ছিল আমার চেয়ে অল্প ছোট, আর রতন আমার ছোট ভাই বিজনের চেয়েও ছোট। এরা ছোট বলে দাদা এদের পাত্তা দিত না। আমি আর বিজন প্রায়ই ওদের বাড়িতে যেতাম, ওরাও আমাদের বাড়িতে আসত।


বড় ভাই মানিকের একটা খুব ভাল গুণ ছিল। কালীবাড়ির পাশের বাড়িতে থাকার জন্যেই হোক বা অন্য কারণেই হোক, সে খুব ভাল কাঁসি বাজাতে পারত। অনেক সময়েই দেখেছি পুজো-মন্দিরে আরতির সময় মানিক একপাশে দাঁড়িয়ে কাসি বাজাচ্ছে। 


রতন ছিল সরল প্রকৃতির ভালমানুষ গোছের। অনেক সময়েই সে না বুঝে মজার মজার কথা বলে ফেলত।


সেবার মানিক-রতনের এক ভাই জন্মাল। খুব ভোরবেলা দু' ভাই ছুটতে ছুটতে আমাদের বাসায় এসে খবর দিল, “আমাদের এক ভাই হয়েছে।”


আমার মা-ঠাকুমা সব প্রশ্ন করতে লাগলেন, “কেমন দেখতে হয়েছে”, “গায়ের রং কেমন হয়েছে”, “মাথায় চুল আছে কি না?” ওই সব নানারকম জিজ্ঞাসা। মানিক আর রতন, যে যা পারে, যথাসাধ্য এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগল।


অবশেষে আমার দাদা জিজ্ঞেস করল, “তোমাদের ভাইয়ের নাম কী?” আমার মা বললেন, “ওদের দু'জনের নাম যখন মানিক-রতন, ওদের ভাইয়ের নাম সোনা কিংবা হিরে হবে।” মানিক চুপ করে ছিল, কিন্তু রতন ঘাড় নেড়ে বলল, “ভাইয়ের নাম জানা যায়নি। বলা যাবে না।” শুনে দাদা বলল, “কেন?” তখন রতন জানাল, “ভাই এখনও কথা বলতে পারছে না। তাই ও বলতে পারছে না ওর কী নাম। আমরাও জানতে পারছি না।”

Post a Comment

Previous Post Next Post